সবকিছুর ভেতর এতো খারাপ খুঁজলে চলে?

প্রকাশঃ মার্চ ৮, ২০১৬ সময়ঃ ৩:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:০৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

setu“সালোয়ার কামিজ পরে আমি ইদানিং আর হাঁটতে পারি না। মনে হয় এক্ষুনি আছাড় খাব। ” এ কথা শুনে কেন কারো চোখ কপালে ওঠে কে জানে! আরে বাবা যে যেটাতে অভ্যস্ত। আমি শাড়ি পরে সাঁতার কাটতে পারি, দৌড়াতে পারি, গাছেও উঠতে পারি। আমার একটুও কষ্ট হয় না। প্রথমদিন থেকেই তো কারো অভ্যাস থাকে না, অভ্যাস হয়ে যায়। আমি চেয়েছিলাম আমার গায়ে বাঙ্গালী পরিচয়টা যেন একেবারে সেঁটে বসে। আমার চুল থেকে নখে বাংলাকে আমি ধারন করতে চেয়েছিলাম।

৭১- এ আমাদের মেয়েরা শাড়ি পড়ে যুদ্ধ করেছে। প্রীতিলতা অস্ত্রাগার লুট করে ফেলল শাড়ি পড়ে। আমি আর এমন কি রাজ কাজ করে বেড়াই? কেউ কেউ আমাকে ভালবেসে বলে ‘দিদি, শাড়ি পোশাকটা মনে হয় তৈরিই হয়েছে তোমার জন্য। ভীষণ মানায় তোমাকে।‘ সেই কথা শুনে আমার ভালো লাগে।

বিদেশে গেলে শাড়ি পড়া মেয়ে দেখলেই ওরা বলে ভারতীয়। ভারতবর্ষের মেয়ে মানেই ওদের কাছে শাড়ি। আমাদের আলাদা করে বলতে হয় যে ‘আমি বাঙ্গালী’। তাতে আমার কষ্ট নেই। সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সময়টা আমরা একসাথে ছিলাম তাই একরকম। এই বঙ্গভঙ্গটা হয়ে একেবারে সব লেজে গোবরে হয়ে যা তা অবস্থা হল।

ধুরু, ছিলাম শাড়িতে আর এলাম কই? যাই হোক, শাড়ি পোশাকটা আমাকে খুব টানে। আমার মোট ১১৯টা শাড়ি। আরাফ গুনে বলেছে। এই সব শাড়ি আমি আমার প্রথম স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আসার পর কেনা। তার আগের সব আমি তো আনিনি। এক কাপড়ে এসেছিলাম।

সালোয়ার কামিজ পড়ি না একেবারেই তা কিন্তু না। পড়ি তবে কম। আরাফ পছন্দই করে না আমার কামিজ পড়া। ও বলে ‘মা সবাই তোমাকে আমার বোন মনে করে কামিজ পরলে’। আরাফের কথা শুনি বলে অনেকে আমাকে বলেছে, ‘এই তো দিদি আপনিও পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ছেলে বলল বলে কামিজ পরা বাদ দিলেন”। আমি হাসি এদের কথা শুনে। এরা নারী হতে যেয়ে মা সত্ত্বাকে ভুলে গেল? মা ছেলের কথা রাখছে এই কথা ভাবতে না পারার দৈন্যতা বয়ে এরা কি ক্লান্ত হয় না?  এই যে আমি টিপ পড়া ছেড়ে দেবার চেষ্টা করছি। এটাও অনেকে খুব বাজেভাবে বিশ্লেষণ করেছে।

বলে ‘শাশুড়ি বলল বলে আপনার নিজের চলার ধরণ বদলে যাবে এটা কেমন কথা। এটা তো ডমিনেট করা আপনাকে”। আমি ভ্রু কুচকে তাকাই তাদের দিকে। যে মানুষের ওপর অন্যের ভালবাসার অধিকার নেই সে বাঁচে কি নিয়ে? তার মতো হতভাগ্য আর আছে কে? সবকিছুর ভেতর এতো খারাপ খুঁজলে চলে? মান অপমান এতো সহজ? সামনে এগিয়ে আসতে চাওয়া নারীরা, তোমরা এতো ক্ষুদ্র বিষয়ে আটকে থেকো না। কত্ত বড় পৃথিবী সামনে। কত কাজ সামনে।

পুরুষ হতে যেয়ে একা হয়ে যায় পুরুষেরা লিখেছিলাম। এমনকি একবার এও লিখেছিলাম ‘কিছু নাস্তিক কেবলই নাস্তিক। হিন্দু মুসলিম ছারো মানুষ হতেও তাদের আপত্তি’। নারী হতে গেলে মানুষ হওয়া যাবে না, মা হওয়া যাবে না, বাড়ির বৌ হওয়া যাবে না এ কথা কে বলল? আমরা তো মায়ের জাত, ভীষণ নরম মন আমাদের। আমরা সবাইকে সাথে নিয়েই আগাতে চাই। সবার হয়েই বাঁচতে চাই। কাউকে আমরা বাদ দেই না।

তবে এও সত্যি, কেউ যদি এই এতোখানি ভালবাসাকে পায়ে ঠেলে আমাদের প্রতি হিংস্র হয় তবে …….. বলেছিলাম আমিই, ‘একা হয়ে যাও নারী। ভয় নেই, ঈশ্বরও তো একা।”

তামান্নার সেতুর ফেসবুক পাতা থেকে এই লাইনগুলো নেয়া হয়েছে।

Tamanna

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G